ঢাকা, বাংলাদেশ ১৭ মে, ২০২৪

হিজবুল্লাহ কারা, কেন হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে?

প্রকাশিত: 06:34 AM, 06 November 2023

হিজবুল্লাহ কারা, কেন হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে?

হিজবুল্লাহ কারা, কেন হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে?

নিজস্ব প্রতিনিধি :

অক্টোবরের ৭ তারিখ। প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে ৫ হাজারের বেশি রকেট আঘাত হানে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনায়। আর এর মূলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। সেই হামলায় সমর্থন দিচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।

 

হামলার পর লেগে যায় ইসরাইল–হামাস সংঘাত। আর নতুন করে আলোচনায় আসে লেবাননের ইরান-সমর্থিত শিয়াপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সংঘাত নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। গত শুক্রবার এক বক্তৃতায় জানান, তারা হামাসের জয় চায়। তবে গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি।

 

হিজবুল্লাহ কারা?

 

হিজবুল্লাহ একটি শিয়া মুসলিম সংগঠন, যা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। লেবাননের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এটি। এক প্রতিবেদনে হিজবুল্লাহ নিয়ে এমন কথাই বলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। আর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, ‘হিজবুল্লাহ’ শব্দের মানে ‘আল্লাহর দল’।  

 

বিবিসি বলছে, গত শতকের আশির দশকের প্রথম দিকে হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া সমর্থিত দেশ ইরানের মাধ্যমেই লেবাননে হিজবুল্লাহর আন্দোলন শুরু হয়। ইসরাইলকে টেক্কা দিতেই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ডস কর্পসের মাধ্যমেই এর প্রতিষ্ঠা। 

 

লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় দেশটির দক্ষিণাঞ্চল নিজেদের দখলে নেয় হিজবুল্লাহ। ১৯৯২ সাল থেকেই দেশটির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছে সংগঠনটি। লেবাননের প্রথম সারির রাজনৈতিক দল হিসেবেও এদের বিবেচনা করা হয়। 

 

হিজবুল্লাহ আসলে কী চায়?

 

প্রতিষ্ঠার প্রথমেই নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে হিজবুল্লাহ। প্রকাশ করা হয়েছিল তাদের ইশতেহার। তাতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও পশ্চিমাদের আধিপত্য বন্ধ করা হবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার এক প্রতিবেদন সে কথাই বলছে।  

 

হামাসের মতো হিজবুল্লাহরও শক্তিশালী সামরিক শাখা রয়েছে। লেবাননে ইসরাইলি ও মার্কিন বাহিনীর ওপর বেশ কয়েকবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে সেই সশস্ত্র বাহিনী। একের পর এক হামলার জেরে লেবানন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় ইসরাইল। ২০০০ সালের ওই ঘটনার জন্য পুরো ‘কৃতিত্ব’ দেওয়া হয় হিজবুল্লাহকে।

 

ওই ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রায়ই জানান দিয়েছে হিজবুল্লাহ। বিবিসির মতে, হিজবুল্লাহর রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাজারো সেনা। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার। ইসরাইল সীমান্তে প্রায়ই নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় এরা। পশ্চিমা রাষ্ট্র, ইসরাইল, উপসাগরীয় রাষ্ট্র ও আরব লীগ এরই মধ্যে হিজবুল্লাহকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। 

 

ইসরাইলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর দ্বন্দ্ব

 

ইসরাইলিদের ওপর হামলা করলেও ইসরাইলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর বড়সড় সংঘর্ষের ঘটনা খুব একটা দেখা যায়নি। তবে ২০০৬ সালে একবার এই দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ওই সময় সীমান্ত এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছিল হিজবুল্লাহ। তাতে দুই ইসরাইলি সেনাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। মূলত ইসরাইলে বন্দি নিজেদের সেনা ফিরিয়ে আনতেই এটি করা হয়। 

 

ওই অভিযানের পর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা শুরু করে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। উদ্দেশ্য ছিল হিজবুল্লাহকে পুরোপুরি নির্মূল করা। ৩৪ দিন ধরে চলে এ হামলা। একে বলা হয় ‘জুলাই যুদ্ধ’। আল–জাজিরা বলছে, এ যুদ্ধে লেবাননের এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। মারা যায় ১৬৫ ইসরাইলি।  

 

তবে হিজবুল্লাহকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। ওই সময়ও টিকে থাকে হিজবুল্লাহ। ধীরে ধীরে আবারও নিজেদের যোদ্ধা বাড়াতে থাকে। এ ছাড়া আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও জমা করতে থাকে। এর পর বর্তমান এ অবস্থানে দাঁড়ায়। ২০০৬ সালের ওই যুদ্ধকে নিজেদের জয় বলেই দাবি করেন ১৯৯২ সাল থেকে হিজবুল্লাহ প্রধানের দায়িত্বে থাকা হাসান নাসরাল্লাহ। 

 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, সীমান্ত নিয়ে ইসরাইলকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না হিজবুল্লাহ। একের পর এক কামানের গোলা, আর রকেট এসে আঘাত হানলে কি আর শান্তিতে থাকা যায়! হামলার কারণে লেবানন সীমান্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল সরকার।

 

লেবাননের সীমান্ত এলাকায় হামলা চালায় ইসরাইল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক বাড়িঘর। গত বুধবার লেবাননের ইয়াতের নামক এলাকায়।

 

২০২১ সালে সংগঠনটির প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ জানান, তার এই বাহিনীতে ১ লাখ যোদ্ধা রয়েছে। তাদের কাছে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা দিয়ে ইসরাইলের যেকোনো স্থানে আঘাত হানা সম্ভব।

 

আমেরিকা বলছে, বছরের পর বছর এই হিজবুল্লাহকে লাখ লাখ ডলার দিয়ে যাচ্ছে ইরান। লেবাননের শিয়াপন্থীরা সব সময়ই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এই দলকে।

 

দুই দেশের দুই সংগঠন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য প্রায় একই, ইসরাইল ও পশ্চিমাদের হটানো। এবার হামাসের সঙ্গে যখন ইসরাইল সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল, তখন বসে নেই হিজবুল্লাহ। সীমান্তে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইসরাইলের অভিযোগ, ইরান এরই মধ্যে হিজবুল্লাহকে ৬ হাজার যোদ্ধা দিয়েছে। তারা সীমান্তে আছে।

 

তবে শুক্রবারের বক্তৃতায় সংঘাত ইস্যুতে নিজেদের পরবর্তী কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার করেননি হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। শুধু বলেছেন, হামাসের জয় চান। আবার এও বলেছেন যে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হোক। তা না হলে এই অঞ্চলে সংঘাত লেগে যাবে। 

 

এ অবস্থায় সংগঠনটির অবস্থান কোনদিকে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে।

আন্তর্জাতিক বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

সম্পাদক ও প্রকাশক
মো: নুহ আলম বিপ্লব
Email: news@adhuniksomoy.com
© 2022 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || AdhunikSomoy.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যা বললেন নোবেলজয়ী মালালা শিরোনাম পদোন্নতি পেয়ে এসপি হলেন ১৭৭ কর্মকর্তা শিরোনাম ইউক্রেনের ১৭টি ড্রোন ধ্বংস করেছে রাশিয়া শিরোনাম বিএনপি নাম্বার ওয়ান ‘কাপুরুষ’: ওবায়দুল কাদের শিরোনাম যার বুদ্ধিতে টাইমড আউটের আবেদন করেন সাকিব শিরোনাম তবে কি ভাঙছে ঐশ্বরিয়ার সংসার?